ফোরকান মাহমুদ ওমান মাস্কাট থেকেঃ আগামী ১৫ নভেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অবৈধ অভিবাসীদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে ওমান। এই সময়ের মধ্যে কোনো জেল, জরিমানা ছাড়াই ওমান থেকে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারবেন ওমানে অবস্থানরত অবৈধ প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
তবে ফেরত আসা শ্রমিকেরা আবার ওমানে প্রবেশের সুযোগ পাবেন কিনা তা নিয়ে কোন কিছু বলা হয়নি ।
ওমান সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে দেশটিতে সদ্যবিদায়ী বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম সরোয়ার।
এদিকে দূতাবাস কতৃপক্ষ কিছুদিন ধরেই সাধারণ ক্ষমার বিষয়টি নিয়ে ওমান শ্রম মন্ত্রনায়ে সাথে যোগাযোগ করে আসছে।
অবশেষে (১০নভেম্বর) দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয় সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা করে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ওমানে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে অবস্থানরত বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া এবং নেপালী নাগরিকেরা এ সুযোগ নিতে পারবে বলেও জানা যায়।
প্রতি পাঁচবছর পর পর সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দিলেও, বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের কারণে, এইবার দীর্ঘ ৬ বছর পর সুযোগ দিয়েছে ওমান সরকার। এর আগে ২০১৫ সালে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিল দেশটি।
তখন প্রায় ২০হাজার অবৈধ অভিবাসী এ সুযোগ গ্রহণ করেছিলেন। এবার বাংলাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের কমপক্ষে ১/২লক্ষ নাগরিক ওমানে এ সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইতিমধ্যে ওমানস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস দেশে ফিরতে আগ্রহী বাংলাদেশিদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া হালনাগাদ করা শুরু করেছে।
ওমান শ্রম মন্ত্রণালয়ের পূর্বে ঘোষণার বিত্তিতে (১৫নভেম্বর) সকাল থেকে দেশে ফিরতে উচ্ছুক হাজার হাজার শ্রমিক নিজেই দূতাবাসে উপস্থিত হয়ে দূতাবাসের নির্দিষ্ট ফরম সংগ্রহ করে, এবং জমা দেন।
ওমান বাংলাদেশ দূতাবাস কতৃপক্ষ বলেন, সাধারণ ক্ষমার অর্থ প্রবাসে অবস্থানরত অবৈধ শ্রমিকেরা জেল এবং জরিমানা ছাড়াই দেশে ফিরতে পারবেন। কিন্তু বৈধ অভিবাসী হতে পারবেন না। তবে আউটপাস নিয়ে দেশে যাওয়া শ্রমিকেরা পরে বৈধভাবে আবার ওমানে ফেরার সুযোগ রয়েছে কিনা তা সুস্পষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি।
এদিকে আরো জানা যায় ওমানে অবৈধভাবে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে করোনা ভাইরাসের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া কমপক্ষে ৪০ থেকে ৬০ হাজার বাংলাদেশী শ্রমিক এ সুযোগ গ্রহণ করবে।
বাংলাদেশ দূতাবাসের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে, মাস্কাটস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, ওমানের শ্রম মন্ত্রণালয় বিদেশী কর্মীদেরকে ১৫ নভেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেওয়া বিনা জরিমানায় নিচের পদক্ষেপ গ্রহণ সাপেক্ষওমান ত্যাগ করার সুযােগ প্রদান করেছে।
তার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে, নিম্মে-
১. ওমানের শ্রম মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট (www.mol.gov.om) এ অথবা আপনার নিকটস্থ সনদ অফিস হতে রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে।
২. যেসব কর্মীর পাসপাের্ট আছে এবং পাসপাের্টের মেয়াদ আছে তাদের দূতাবাস হতে Travel Permit (আউটপাস) সংগ্রহ করতে আসার কোন প্রয়ােজন নেই।
৩. যাদের পাসপাের্ট আছে কিন্তু মেয়াদ নেই কেবলমাত্র তারা দূতাবাসে এসে পাসপাের্ট নবায়ন করতে পারবেন; অথবা
৪. Travel Permit (আউটপাস) এর জন্য দুতাবাসের নির্ধারিত ফরম পূরণ করে দূতাবাসে জমা প্রদান করবেন এবং দূতাবাস হতে প্রদত্ত ভেলিভারীর তারিখে Iravel Pemit
(আউটপাস) সংগ্রহ করবেন।
৫. আপনার ফ্লাইটের বা বিমান টিকেটে উল্লিখিত তারিখ ও সময়ের ৭(সাত) ঘন্টা পূর্বে মাস্কাট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্থাপিত ওমান শ্রম মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত কাউন্টারে
নিম্নবর্ণিত কাগজপত্রসহ উপস্থিত হবেন?
ক) বিমান টিকেট
খ) পাসপাের্ট দূতাবাস কর্তৃক স্বাক্ষরিত Travel Permit (আউটপাস)
গ) করােনা পরীক্ষার রিপাের্ট।
৬. দূতাবাস হতে Travel Permit (আউটপাস) সংক্রান্ত সেবা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রদান করা হবে। এ কাজে কোন মধ্যস্বত্বভোগী বা দালালের সাথে কোন প্রকার অবৈধ লেনদেন করা হতে বিরত থাকার জন্য সবাইকে অনুরােধ করা হলাে।
এদিকে যাদের পাসপোর্ট বা পতাকা কিছুই নেই তাদের ব্যাপারে ওমান শ্রম মন্ত্রণালয় বা পত্র পত্রিকা গুলোতে স্পষ্ট কোন কিছু বলা হয়নি।
উল্লেখ্য যে ওমানে বিদেশি শ্রমিকদের সংখ্যার অনুপাতে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, শ্রমিক পাঠানোর দিক থেকে ওমান বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক শ্রমবাজার।