জীবনের পরিপূর্ণতা
শরফুদ্দিন সজীব।
আফসানা অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।খুবই ধার্মিক একজন মেয়ে।দেশে যেখানে পশ্চিমা সংস্কৃতির আনাগোনা বেড়েই চলছে সেখানে আফসানা সম্পূর্ণ বিপরীত। ইসলামী রীতিনীতিকে আঁকড়ে ধরে জীবন ধারণ করাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে সে।হাত পায়ের মোজা,কালো রঙের বোরকা এবং নেকাব পড়ে প্রতিনিয়ত কলেজে যায় আফসানা।যার কারণে আধুনিক নারীদের হাসি বিদ্রুপের শিকার হতে হয় পদে পদে।বেশিদিন আগের নয়,
কলেজের ক্লাস চলতেছে। প্রফেসর স্টুডেন্টদের কয়েকটি দলে ভাগ করে দলীয় কাজগুলো করতে বললেন।আফসানাকেও একটি দলে ভাগ করে দিলেন।দলের সবাই মিলে বিষয়টি সম্পর্কে মতামত দিচ্ছে।আফসানা যখনই মতামত দিতে চাইলো তখন কেউ তার দিকে কর্ণপাত করলো না।এখানেও আফসানা হেয় প্রতিপন্ন।এই নয় যে আফসানা পড়ালেখায় দুর্বল,বরং অন্যতম একজন মেধাবী ছাত্রী।বারবার অবহেলিত হওয়াতে সামান্য মনক্ষুন্ন হলো তার।মত প্রকাশের স্বাধীনতা ব্যক্তির অধিকার।অধিকার থেকে বঞ্চিত হলে যে কারো মন খারাপ হতে পারে।
“আমি কি এই দলের একজন নই?”মৃদুস্বরে প্রশ্ন ছুড়ে দিল আফসানা। সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।গোমরা মুখে মাথাটা নিচু করে ফেলল আফসানা।
“আচ্ছা তুমি কি কলেজের ছাত্রী? তোমার সাথে কী কলেজের কোন মেয়ের পোশাকের মিল আছে? মনে হচ্ছে আরবের কোন দেশ থেকে পালিয়ে এসেছো।”ক্লাসের সবচেয়ে স্টাইলিশ মেয়ে ফারিহা কিছুটা কৌতুক ভঙ্গীতে প্রতুত্তর দিলো।
“আমরা সবাই মুসলমান। মুসলমান নারীদের জন্য পর্দা করা ফরজ। আমি পর্দা করতেছি। এতে তোমাদের সমস্যা তো কিছুই দেখছি না।” খুব জোর দিয়ে বলল আফসানা।
“মেয়ে কি বলে দেখ!” সাথে অট্টহাসি।
“আমরা কি উলঙ্গ নাকি? এখানে সবাই কাপড় পড়ে এসেছে। এতটুকু পর্দার জন্য যথেষ্ট নয় কি?” যুক্তি সমেত প্রশ্ন ছুড়ে দিলো ফারিহা।
“না, তোমরা যে পোশাক পড়ে এসেছো এতে পরিপূর্ণ পর্দা হচ্ছে না। এই যে হাফ হাতা পোশাক,খালি মাথা,মুখে নেকাব নেই। এগুলো সম্পূর্ণ ইসলামের বিপরীত।”উত্তর দিলো আফসানা।
“তবে ইসলামে পর্দা কেমন বলুন হে বোরকা ভুত।” তুচ্ছ করে বলল ফারিহা।
আফসানা বলতে শুরু করল, “পর্দা শরীয়তের একটি ফরজ বিধান। এই বিধানের প্রতি সমর্থিত থাকা ঈমানের দাবী।কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে পশ্চিমা সংস্কৃতি এবং সভ্যতার প্রভাবে আমাদের ‘মুসলিম সমাজ’ এতটাই প্রভাবিত হয়েছে যে কুরআন ও সুন্নাহের বিধান তাদের কাছে অপরিচিত ও অপ্রয়োজনীয়। পর্দার বিধান শুধু আমাদের আখেরাতের নাজাতের উপায় নয়, দুনিয়ার জীবনের শান্তি, স্বস্তি ও পবিত্রতা রক্ষা কবচ।কিন্তু ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা ও অমুসলিমদের প্রচারণায় প্রভাবিত হয়ে আমাদের নিজেদের আদর্শ ত্যাগ করে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছি। পর্দার ব্যাপারে মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণ এবং কন্যাগণকে বলুন,যখন প্রয়োজনে বাইরে বের হতে হয় তখন তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এমনকি চেহারাও যেন খোলা না রাখে। তারা যেন চাদরের ঘোমটা দ্বারা নিজেদের চেহারাকে আবৃত করে রাখে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।’
(সূরা আহযাব,আয়াত:৬০)
নারীকে হাদীস শরীফে ‘আওরত’বলা হয়েছে। ‘আওরত’ শব্দের অর্থ গুপ্ত বা আবৃত। সুতরাং নারীর নামে বুঝা যায় নারীর জন্য পর্দা আবশ্যকীয়।”কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে শেষ করল আফসানা। দলের সবার মধ্যে সুনসান নিরবতা। আফসানা সবার চোখে চোখে তাকাচ্ছে। বুঝার চেষ্টা করতেছে তারা বিষয়টি কতটুকু অনুধাবন করল।
নীরবতা ভেঙ্গে ফারিহা দুই হাতে তালি দিয়ে উঠলো।”বাহ্ বাহ্ আপনার লেকচার শেষ হয়েছে?”
“স্যার! এই বোরকা পরিহিত ভুত মেয়েটি আমাদের সবাইকে ডিস্টার্ব করতেছে। কোত্থকে খুঁজে খুঁজে বানিয়ে বানিয়ে কথা বলে আমাদের ব্রেইন ওয়াশ করতেছে।”উচ্চ আওয়াজে প্রফেসর কে উদ্দেশ্য করে অভিযোগ করলো ফারিহা।
সেদিন ক্লাস থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল আফসানাকে। কিন্তু তার কোন আফসোস ছিল না। প্রতিনিয়তই এই রকম শত বাধা বিগ্নতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এই আর নতুন কি? যাকে বলে”অল্প শোকে কাতর অধিক শোকে পাথর।”
সেদিনের পর থেকে রাগে,মনের ক্ষোভে আর কলেজে যায়নি সে। আজ আবার কলেজ যাচ্ছে। তবে ক্লাস করতে না,পরীক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে।
যথারীতি পরীক্ষা শুরু হলো। পরীক্ষা শুরু হওয়ার মুহূর্তেই হল গার্ড আফসানার কাছে আসল।
-এই মেয়ে মুখের নেকাব সরাও।
-কেনো স্যার?
-এডমিট কার্ডের চেহেরার সাথে তোমার চেহেরা মিলিয়ে দেখতাম।
-দুঃখিত স্যার আমি কোনো বেগানা পুরুষের সামনে মুখের নেকাব খুলতে পারব না। কোনো একজন ম্যাডাম আমাকে অন্য একটি রুমে নিয়ে চেক করতে পারেন।
-বেয়াদব মেয়ে টিচারের মুখের উপর কথা!
-স্যার আপনি আমার পিতৃতুল্য শিক্ষক। আপনার সম্মান আমার শিরে। আপনাকে সম্মান করা ফরজ। তবে পর্দা করাও ফরজ। আমি আপনার উপর পূর্ণ সম্মান রেখে বলছি সবার সামনে আমি নেকাব খুলবো না।
-ইডিয়েট! বের হও হল থেকে।
অবশেষে আফসানার পণের কাছে স্যার হার মানলেন।শেষ পর্যন্ত আফসানা পরীক্ষা দিলো। এতো বড় বাঁধার সম্মুখীন হয়েও ইসলামের বিধানে সামান্য সেক্রিফাইস করেনি সে। বরং ইসলামি বিধান প্রতিষ্ঠা করেছে।
পরদিন
,
,
,
,
আজকে পরীক্ষা দিতে হলে ঢুকেই আফসানা আশ্চর্য হয়ে গেলো। হলের সব মেয়ে ইসলামি পোশাক তথা বোরকা-নেকাব পড়ে এসেছে। যে সব মেয়েরা প্রতিনিয়ত পর্দার বিরোধিতা করত আজ তারাই ইসলামের ছায়াতলে এসে পর্দার বিধান কায়েম করতেছে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায়ার্তে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলল আফসানা। হাত তুলে দো’য়া করল ‘আল্লাহ আমাদের বোনদের এই পরিবর্তন যেনো হাশরের ময়দানে নাজাতের উছিলা হয়।’