অব্যক্ত বেদনা
আরুহান রানা
বিকেলে হাঁটতে বের হলাম।এটা আমার প্রতিদিনকার অভ্যাস।সন্ধ্যার আগে ত্রিশ মিনিট না হাঁটলে মনটাই ভালো থাকে না।হঠাৎ করিম চাচার সাথে দেখা। খুবই রসিক মানুষ তিনি। আমাকে খুব স্নেহ করেন। মন খারাপ থাকলে করিম চাচাকে খুঁজে উনার সাথে সময় কাটায়।মজার মজার কথা বলে ওনি নিমিষেই মনটা ভালো করে দেন।কিন্তু আজ চাচাকে ব্যতিক্রম মনে হচ্ছে। সূর্য প্রায় অস্ত যাচ্ছে,গরমের প্রকোপ নেই বললেই চলে।কিন্তু করিম চাচার কপালে ঘাম জমে আছে।উনাকে দেখে মনে হচ্ছে খুবই চিন্তায় আছেন।মুখটা কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে । সামনে এগিয়ে গিয়ে চাচার মুখোমুখি হলাম,
-চাচা মন খারাপ নাকি?
-বলিস না রানা!খুবই চিন্তায় আছি।
-কোনো সমস্যা হল চাচা?
-না!তেমন কোনো সমস্যা হয় নি।
-একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন কয়েক মাস হলো।তাকে নিয়ে কিছুটা টেনশন ছিল আপনার।আমি যতটুক জানি আপনার এখন তো কোনো চিন্তা থাকার কথা না।
চাচা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললেল,
-ভাতিজা ঠিক বলছিস!একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দেওয়া নিয়ে কিছুটা চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু বিয়ের পর চিন্তাটা যে আরো বেড়ে গেল।
এই কথা গুলো বলে আনমনে আকাশের দিকে থাকিয়ে রইলেন। কি যেন চিন্তা করতেছেন।যে মানুষটা সব সময় হাসি খুশিতে থাকতেন,মজার মজার কথা বলতেন সে মানুষটা যখন চুপ করে থাকে কেমন জানি লাগে।ওনাকে এমন দেখে আমার নিজেরও মন খারাপ হয়ে গেলো।
-চাচা!এত চিন্তা করে কি হবে? চিন্তা কি আপনাকে সমাধান দিবে?কি বিষয় নিয়ে চিন্তা করতেছেন আমাকে বলতে পারেন।
চাচা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,
-ভাতিজা! কিছুদিন আগেই তো আমার সোনার টুকরো মেয়েটাকে বিয়ে দিলাম। বিয়ের আগের দিন মেয়ের শাশুড় বাড়িতে এক লক্ষ চল্লিশ হাজার টাকার ফার্নিচার দিলাম।বিয়ের দিন মেয়ের স্বামীকে শর্ত অনুযায়ী এক লক্ষ টাকা দিলাম।এখন,,,,,,
এতটুকু বলে চাচা আবার চুপ করে রইলেন। উনার চোখ দু’টো টলোমলো হয়ে আছে । এখনই যেন নুনতা জজল গুলো গড়িয়ে পরবে।
-এখন কি চাচা বললেন না যে?
-এখন আমার কাছে একটা টাকাও নাই। কয়েকদিন পর ঈদুল আযহা।মেয়ের শশুড় বাড়িতে গরু দিতে হবে।
-আচ্ছা চাচা গরুটা না দিলে হয় না?
-আরে ভাতিজা! তুমি না হয় আমার দুঃখটা বুঝলে।কিন্তু চায়ের দোকানের সুশীল সমাজের মানুষেরা আমাকে দেখলে জিজ্ঞেস করবে, “কিরে মেয়ের শাশুড় বাড়িতে গরু পাঠিয়েছিস?” রাস্তায় কেউ দেখলে বলা শুরু করবে, “কিরে মেয়ের শশুড় বাড়ির জন্য কত টাকার দিয়ে গরু নিয়েছিস?”তুই বল ভাতিজা এই অবস্হায় লজ্জায় আমি কতজনকে উত্তর দিব?
একটু থামলেন করিম চাচা। কয়েকটা ঢোক গিললেন। চোখের পানি গুলো আটকে রইল না বেশীক্ষন। কয়েক ফোটা গড়িয়ে পড়েছে।আবার বলতে লাগলেন,
-আমার পাশে কেউ আছে কিনা নেই সেটা দেখবে না।আমি কেমন আছি সেটা জিজ্ঞেস করবে না ।না খেলে জিজ্ঞাস করবে না ভাত খেয়েছিস?কিন্তু একটু ভুল আর কুসংস্কার গুলা দেখার জন্য আমাদের সমাজের মানুষেরা মুখিয়ে থাকে।
করিম চাচার কথা গুলো শুনে আমি রাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। কখন যে আমার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ল নিজেই বুঝতে পারিনি।