প্রবাস ডেস্কঃ ওমানে আনন্দঘন পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে পিঠা উৎসব। উৎসবে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়; যা প্রবাসী বাংলাদেশীদের কাছে বেশ প্রশংসিত হয়েছে।
ওমানে প্রতিবছর কোনো না কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ওমানস্থ বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাব। এসব অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় এবার আয়োজন করা হয় বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে পিঠা উৎসবের।
শুক্রবার (১০ মার্চ) দুপুর ২টায় হালবান বার্ড সেন্সুরি ফার্মে ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এমএন আমিন এবং ক্লাবের মহিলা উইংসে কনভেনর ডাক্তার জান্নাতুল নাইম জুঁই এর যৌথ পরিচালনায় এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত।

ক্লাবের চেয়ারম্যান সিরাজুল হকের সভাপতিত্বে প্রধান মেহেমান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ওমান গাল্ফ এক্সচেঞ্জ এর প্রধান নির্বাহী ইফতেখার উল হাসান চৌধুরী।
গেষ্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিমান কান্ট্রি ম্যানেজার শরিফুল আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ নোমান।
আরো উপস্থিত ছিলেন, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি আলহাজ্ব সাহবউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান তালুকদার, ক্লাব কর্মকর্ত এবং কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ।
পুরো অনুষ্ঠানের সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন, ক্লাবের ভাইস চেয়ারম্যান রেজাউল করিম, সহ-সভাপতি আজিমুল হক বাবুল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, আবুল বশর সরকার, নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, সাহিত্য সম্পাদক শাহজান ভূইয়া, ক্রীড়া সম্পাদক সিরাজুল হক।

উক্ত পিঠা উৎসবের প্রধান স্পনসর হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ইঞ্জিনিয়ার রাকিবুল হাসান।
এদিকে সংবর্ধিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মাহবুব শিকদার। তিনি দীর্ঘ ৪৪ বছর প্রবাস জীবনের ইতি টেনে স্বপরিবারে চলে যাচ্ছেন। তার বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির সুয়াবিল। তিনি বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাব ওমানের কার্যনির্বাহী সদস্য ছিলেন। দীর্ঘ ৪৪ বছর প্রবাস জীবনে তিনি কমিউনিটিকে প্রতিটি মানবিক কাজে সার্বিক সহযোগীতা করে গিয়েছেন।
তার বিদায়বেলায় ওমানস্থ বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাবের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে সম্মাননা স্বরক।
উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ছিল হরেক রকমের পিঠা। ওমানের বিভিন্ন এলাকায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি নারীরা নানা নামের বাহারি নকশার মুখরোচক সব পিঠা নিয়ে হাজির হন উৎসবে।
ভাপা, নারিকেল দুধ পুলি, গোলাপ পিঠা, পাটিসাপটা, চিতই, মালপোয়া, ফুলঝুরি, সেমাই পিঠার মতো সুস্বাদু ও নজরকাড়া অন্তত ৩০ জন গৃহিণী সর্বোচ্চ ৫০ রকমের বাহারি পিঠা প্রদর্শন করেন এই পিঠা উৎসবে। যা আগত অতিথিদের নজরকাডেন।

বাংলাদেশী প্রবাসীদের বিনোদন দিতে এবং ভ্রমণে উৎসাহী করতে, আগত অসংখ্য নারী পুরুষদের জন্য আয়োজন করা হয় খেলাধুলার।
এদিকে দুপুর থেকেই উৎসবে স্বপরিবারে আসতে থাকেন ওমানে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীরা।
সোশ্যাল ক্লাবের চেয়ারম্যান ও ক্লাবের অন্য কর্মকর্তারা অতিথিদের স্বাগত জানান।
অতিথিরা পিঠার স্টল ঘুরে দেখেন এবং পছন্দমতো বিভিন্ন পিঠা ও খাবারের স্বাদ গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের বাহারি সব খাবারের স্বাদ ও গুণগতমানের বেশ প্রশংসা করেন তারা। পিঠা উৎসবকে স্বরণীয় করে রাখতে বন্ধুবান্ধব ও পরিবার মিলে দিনটি উৎসবমুখর পরিবেশে পালন করেন তারা। উৎসবটি বাঙালির মিলনমেলায় পরিণত হয়। যেন মরুর বুকে একখণ্ড বাংলাদেশ। খাওয়া-দাওয়া, খেলাধুলা ও আড্ডায় মেতেছিল ছোট-বড় সবাই।
বাহারি পিঠায় মুগ্ধ হয়ে সোশ্যাল ক্লাবের চেয়ারম্যান সিরাজুল হক বলেন, ‘এ যেন মরুর বুকে একখণ্ড বাংলাদেশ। বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে আছে পিঠা। আর তাই পিঠা বাঙালির জীবন ও লোকজ খাদ্য সংস্কৃতির এক অপরিহার্য অংশ। বিদেশিদের কাছে আমাদের দেশের ভালো দিক, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি তুলে ধরতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রবাসের মাটিতে এ ধরনের অনুষ্ঠান দেশের সুনাম ও পরিচিতি বাড়াবে। বিদেশিদের কাছেও বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিসহ ঐতিহ্যবাহী সব খাবার পরিচিত করে তুলতে এমন আয়োজনের বিকল্প নেই।
বিদেশিদের মাটিতে বাংলাদেশের সাংস্কৃতি ও পরিচয় তুলে ধরতে সোশ্যাল ক্লাবের এমন আয়োজনে প্রবাসী আয়োজকরাও আনন্দিত। দেশের সুনামের জন্য এমন দায়িত্ব পালন তারা নিঃস্বার্থভাবে করে যাবেন বলে জানান তারা।
বিদেশের মাটিতে বৈশাখী মেলা, বসন্ত উৎসব, ফাল্গুনী উৎসব, পিঠা মেলাসহ বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানের সাথে সাথে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে আমাদের সন্তানেরা অবগত হন।