

এম হোসাইন
আধুনিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় গণতন্ত্রের উপস্থিতি অপরিহার্য। বিশ্বের অধিকাংশ কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বেশ প্রচলিত ও জনপ্রিয়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার মধ্যে রাজনৈতিক দলের ভূমিকা অপরিসীম। রাজনৈতিক দল ব্যতিত কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো সার্বিকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব নয়। আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় দু’ধরনের রাজনৈতিক দলের উপস্থিতি বিদ্যমান থাকে। বাংলাদেশেও তার ধারাবাহিকতার ভিন্ন কিছু নয়। বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা বিদ্যমান থাকায় বহু রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম কমবেশি পরিলক্ষিত হয়। বাংলাদেশের সংসদীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় দেশের দুই বৃহৎ রাজনৈতিক দল ( বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ ও দেশের অন্যতম বিরোধী দল বিএনপি) রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ অর্জন করলেও অন্যান্য রাজনৈতিক দল সমূহ সমানতালে দেশের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণভাবে অবস্থান করছে। যা গণতান্ত্রিক বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থার কাঠামোগত দিক বিবেচনায় ইতিবাচক ও গণতন্ত্রের জন্য আশীর্বাদ স্বরুপ।
রাজনৈতিক দলগুলো নির্দিষ্ট আদর্শ ভিত্তিক প্রতিষ্ঠিত হলেও সবার মাঝে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা লাভের আগ্রহের কমতি থাকেনা। যদিও রাজনৈতিক দলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ক্ষমতা গ্রহণের বিষয়টি। এক্ষেত্রে ক্ষমতার গ্রহণের প্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি জোর দিতে হবে। রাজনৈতিক দলীয় আদর্শ প্রচারের মাধ্যমে জনগণের জনসমর্থন আদায়, নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক স্বাভাবিক পথে ক্ষমতা লাভের মাধ্যমে রাজনৈতিক বিজয় ও গণতন্ত্রের সঠিক চর্চার প্রতিফলন ঘটে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সাফল্যের চেয়ে সমালোচনার বিষয়টি অধিক প্রাধান্য পায়। স্বাধীনতার পরবর্তী রাজনৈতিক ইতিহাস অধিকাংশ জুড়ে ব্যর্থতা, ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখার প্রবণতা, সাংবিধানিক শক্তির অপব্যবহার, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, অগণতান্ত্রিক ক্ষমতা দখলের চেষ্টার মাধ্যমে গণতন্ত্র চর্চার আড়ালে অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক ও রাজনৈতিক নীতি বহির্ভূত কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকার অভিপ্রায় লক্ষ করা যায়। যার ফলে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা বিদ্যমান থাকার পরেও এদেশে গণতন্ত্রের সঠিক চর্চা, রাজনৈতিক শ্রদ্ধাবোধ, অন্য রাজনৈতিক দলের প্রতি অগাধ আস্থা রাখার মতো মানসিকতা কোনোভাবে কোনো রাজনৈতিক দলের মাঝে ফিরে আনা সম্ভব হয়নি। ফলশ্রুতিতে রাজনৈতিক অঙ্গনে সর্বদা সহিংসতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজমান থাকে।
ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হতে হলে দলের মধ্যকার গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় এবং সুষ্ঠু গণতন্ত্রের চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে। দলীয় রাজনৈতিক ক্ষুদ্র স্বার্থ পরিহার করে দেশ ও জাতির কল্যাণ বিবেচনায় রাজনৈতিক ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করার মাধ্যমে রাজনৈতিক সাফল্য অর্জিত হয়। গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি ও বজায় রাখার ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সরকারের পাশাপাশি সক্রিয় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে ভূমিকা পালন করতে হবে। ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার প্রবণতা, অগণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আনা কিংবা রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের প্রত্যাশায় রাজনৈতিক সহিংসতা সৃষ্টি করার মাধ্যমে দেশের অগ্রগতি ও অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা যেমন ব্যাহত হয় তেমনি দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাজনৈতিক পরিবেশকে সুসংগঠিত করার পূর্বশর্ত হলো রাজনৈতিক অঙ্গনে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি। গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি না হলে রাষ্ট্রের রাজনৈতিক কাঠামো ভঙ্গুর ও দূর্বল হয়ে যায়। জনগণের মাঝে অস্বস্তি মনোভাব জাগ্রত হয় এবং রাজনৈতিকভাবে দলগুলো জনসম্মুখে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জনগণের নিরুৎসাহিত হওয়ার প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। যা কখনো সুফল বয়ে আনবেনা গণতান্ত্রিক সকল প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত নেতিবাচকভাবে জনগণের উপস্থিতি ও সমর্থন তলানিতে এসে পড়ে। দেশ ও আন্তর্জাতিকভাবে এদেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক বিষয়ে নানামুখী সমালোচনার কবলে পড়তে হয়।
গণতান্ত্রিক পন্থা অনুসরণ ছাড়া ক্ষমতা দখল কিংবা ক্ষমতা লাভের বাসনা পোষণ করা হলে তা জনগণের মতামতকে চরমভাবে উপেক্ষিত করার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুল প্রদর্শন করার মতো হয়। গণতন্ত্র বিশাল রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনার নাম। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে রুপ দিতে হলে সকল রাজনৈতিক দলের মাঝে গণতন্ত্রের সঠিক চর্চা ও রাজনৈতিক শ্রদ্ধাবোধ ফিরে আসতে হবে। ক্ষমতা লাভের বিষয়টি ছাড়াও জনগনের কল্যাণ ও দেশের অগ্রগতিকে সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিতে হবে এদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে। তাহলে দেশের জনগণের মাঝে রাজনৈতিক সচেতনতা জাগ্রত হবে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মতাদর্শের প্রভাবিত হয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জনগণ সক্রিয় অংশগ্রহণ করবে এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় গৃহীত রাজনৈতিক কর্মসূচিতে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। তাই দেশের সামগ্রিক রাজনীতির পরিবেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়নসহ সকল সহিংসতা, বিরাজমান হিংসাত্মক মানসিকতা রোধের ক্ষেত্রে প্রয়োজন সকল রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে গণতান্ত্রিক সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি এবং গণতন্ত্রের সঠিক চর্চা। তাহলে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সবার জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে, দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি সমুন্নত থাকবে।