
এম হোসাইনঃ
আমরা প্রায় সময় শুনে থাকি ঐ লোকটি মেজবান খেয়ে আসার পথে বা ঘরে এসে মারা গেছে। তাহলে লোকটির মৃত্যুর দায় কি মেজবান আয়োজক বহন করবে?? এই প্রশ্নের বিশ্লেষণধর্মী উত্তর পাঠকের কাছে জানতে চাই।
গত কিছুদিন আগে দেখলাম কোনো ভুঁইফোড় অনলাইন মাধ্যমে “লিচু খেয়ে শিশুর মৃত্যু” শিরোনামে একটি দুঃখজনক সংবাদ প্রচারিত হয়েছে। বলে রাখা ভালো প্রক্রিয়াজাত যেকোনো খাবার শিশু সহ সকল বয়সী মানুষদের জন্য স্বাস্থ্য ক্ষতিকর। কিন্তু প্রক্রিয়াজাত খাবার প্রস্তুতকারক সকল প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়ী উদ্দেশ্যে সরকারের নীতিমালার আওতায় থেকে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে থাকে। স্বাস্থ্য সচেতনতা নিজেদের মধ্যে তৈরি করতে হবে। নিজেরা স্বাস্থ্য অসচেতনতার দিকে ঝুঁকবেন আর ক্ষতিকর বিষয়ের জন্য অপরের প্রতি দোষারোপ করবেন তা যথেষ্ট সাংঘর্ষিক। আলোচনায় আসি। এমন শিরোনামে যে কেউ উৎসাহী হয়ে ঘটনার বিষয় জানতে চাইবে। আমিও কথিত সংবাদটি দেখার চেষ্টা করি। তবে বিষয়টি সংবাদ শিরোনামের সাথে ঘটনার কোনো মিল নেই। যথারীতি সাংঘর্ষিক ও বৈপরীত্য হিসেবে বিবেচ্য। অবুঝ শিশুর গলায় লিচু আটকে গিয়ে শিশুর মৃত্যু হয়েছে এমনটি মৃত শিশুর অভিভাবক জানিয়েছেন। তাহলে মৃত্যুর কারণ কেনো লিচু খাওয়াকে কেন্দ্র করে হয়েছে কিংবা এমন শিরোনাম উদ্ভট ব্যতিত আর কিছু ইঙ্গিত করেনা। মৃত্যুর কারণ না জেনে মনগড়া, কাল্পনিক ও অবাস্তব বিষয়ের ওপর সংবাদ পরিবেশন করা কোন সাংবাদিকতার আওতায় আসে তা আমাদের বোধগম্য নয়। লিচু খাওয়ার পর সত্যিই ছেলেটির মৃত্যু হলে হাসপাতালের পরীক্ষা নিরীক্ষা, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মন্তব্যটি তখন অপরিহার্য বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। আসলে কি লিচু খাওয়ার ক্ষতিকর প্রভাবে কি শিশুর মৃত্যু ঘটেছে কিনা তা সঠিক তদন্তের বিষয় রয়েছে।যদি লিচু খাওয়ার পরেও কোনো শিশুর মৃত্যু ঘটে তা উপযুক্ত মেডিকেল প্রমাণ ছাড়া লিচু খাওয়াতে মৃত্যু হয়েছে এমনটি বলা যাবেনা। তাছাড়া লিচুগুলো খাওয়ার পর একাধিক শিশু বা মানুষের মৃত্যু ঘটলে অথবা অসুস্থ হওয়ার ঘটনা সৃষ্টি করলে তখন বিষয়টি বিবেচনার বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। তখন মন্তব্য ব্যতিত বলা যাবে আসলে লিচুর ক্ষতিকর প্রভাবে এমন দুঃখজনক ও মর্মান্তিক ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে। লিচু গলায় আটকে শিশুর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রক্রিয়াজাত লিচুর ওপর দায় ছাপিয়ে দেওয়াটা মোটেও দায়িত্বশীল আচরণের মধ্যে পড়েনা। এমন মন্তব্য বা শিরোনাম ঘটনার বিপরীতে অবস্থান হওয়ায় তা যথারীতি আইন বিরোধী ও অসংগতিপূর্ণ। এমন উদ্ভট শিরোনাম উপস্থিত সংবাদ প্রকাশের ঘটনা এখন প্রতিনিয়ত ঘটছে।
যে কেও মোবাইল নিয়ে এবং সাংবাদিকতার পরিচয় দিয়ে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে ভিডিও ধারণ করে অযাচিত, অগুরুত্বপূর্ণ ও প্রতিষ্ঠানের সম্মান ক্ষুন্ন হয় এমন মন্তব্য করার ফলে এর নেতিবাচক প্রভাব চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ছে। রাষ্ট্রীয় (দাপ্তরিক) প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে কথিত মোবাইল সাংবাদিকদের আনাগোনা রোধ করতে হবে। এদের বিভ্রান্তিকর ও সন্দেহজনক কার্যকলাপের ফলে সাধারণ জনগণের মাঝে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। কথিত মোবাইল সাংবাদিকদের ভালো মানাবে কারো গায়ে হলুদের ভিডিও ধারণ, মেজবানের ভিডিও প্রচার করা এবং কারো পদলেহন করে তৈলাক্ত ভিডিও প্রচার করে পকেট কাটার মতো কাজে। রাষ্ট্র ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কাজে এদের তৎপরতা রোধ না করলে এদেশের মানুষের মাঝে গভীর বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়বে।
পেশাদার দায়িত্বশীল সাংবাদিক সমাজদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কথিত মোবাইল সাংবাদিকদের রুখে দেওয়ার সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করার আহ্বান জানাচ্ছি। সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় প্রশাসন ও দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানদের এবিষয়ে সজাগ থেকে এসব অপ-সাংবাদিকতার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ সময়ের দাবী।
